|

ব্রাহমাস্ত্রা মুভি রিভিউ BRAHMaSTRA Movie Review

গতকালই তো মুক্তি পেল বলিউডের মোস্ট এন্টিসিপেটেড Brahmastra মুভির ট্রেলার, যেটার স্টোরিটা অনেকটা সুপারহিরো এবং হিন্দু মিথোলোজির সমন্বয়ে গঠিত, তো আজকে আমি আসলে এটা কোন মিথোলোজির উপর বেসড করে বানানো সেটা সবার সামনে উপস্থাপন করব সেই সাথে ট্রেলারের কিছু এক্সপ্লেইনও থাকবে। তো চলুন শুরু করি।

“হিন্দুধর্ম অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা হল ত্রিদেব( ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব)। এই ত্রিদেবের মধ্যে দেবতা ব্রহ্মার যে অস্ত্র সেটার নাম হচ্ছে ব্রহ্মাস্ত্র যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।

হিন্দু মিথোলোজিতে অনেক ধরনের অস্ত্র আছে। একেকজন দেবতা একেক রকমের অস্ত্র ব্যবহার করে রাক্ষসদের মারার জন্য। এমনকি কোনো যোদ্ধা যদি তাদেরকে তপস্যা করে সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলে তাদের সেই অস্ত্রগুলো প্রদান করা হত। সেগুলো সম্পর্কে ট্রেলারের এঙ্গেলেই বলছি।

” ট্রেলার দেখেই বুঝা যায় যে পৃথিবীতে ব্রহ্মাস্ত্রকে অনেকে প্রোটেক্ট করতেছে।বাট যারা প্রোটেক্ট করতেছে তাদের সবার কাছে একেক রকমের পাওয়ার আছে। ওগুলো কিন্তু একেকটা অস্ত্রের পাওয়ার। বাট গল্পের মেইন হিরো শিবা সে কিন্তু সেটা জানেনা। হঠাৎ সে দেখতে পায় তার হাত আগুনে পুড়ে না। তারপর সে এ রহস্য উদ্ঘাটনে বের হয়ে এক নির্মম সত্যের সম্মুখীন হয়। এবার আসি ব্রহ্মাস্ত্র ছাড়া আর কোন কোন অস্ত্রের রেফারেন্স আছে।

১. আগ্নেয়াস্ত্র: আগুনের দেবতা অগ্নিদেব এ অস্ত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে। মহাভারতের যুদ্ধে অর্জুনকে এ অস্ত্র প্রদান করেছিলেন অগ্নিদেব,এ অস্ত্র ব্যবহারকারী আগুনের মত তেজস্বী হয়। ট্রেলারে রনবীর কাপুরের লাইটেনিংকে আগুনের মত দেখানো হয়েছে,তার মানে তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্রের পাওয়ার আছে।

২. বরুণাস্ত্র : বরুণ শব্দের অর্থ হল জল। জলের দেবতা বরুণ এ অস্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা বিভিন্ন মুভিতে দেখি জল রিলেটেড যেকোোন কিছুকে light blue কালারে প্রকাশ করা হয়। ট্রেলারে নাগার্জুনার লাইটেনিংকে light blue দেখানো হয়েছে,যেটা আরো বেশ কিছু যায়গায়ও ট্রেলারে আছে। তার মানে নাগার্জুনার কাছে বরুণাস্ত্রের পাওয়ার আছে।

৩. শক্তি অস্ত্র : দেবরাজ ইন্দ্র একবার কর্ণের দানে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে এ অস্ত্র দিয়েছিলেন। বাট এ অস্ত্রের কোনো রেফারেন্স ট্রেলারে দেখিনাই তবুও জানিয়ে রাখলাম।

৪. পাশুপত অস্ত্র: ভগবান শিব অর্জুনকে এ অস্ত্র দিয়েছিলেন। এ অস্ত্রের রেফারেন্স কিন্তু ট্রেলারে আছে। ট্রেলারে শিব ঠাকুরের মত কেউ একজনকে দেখা গেছে,ওটা মেবি শিব ঠাকুরের কোনো অবতার বা তাকে প্রতিনিধিত্বকারী কেউ একজন হবে যেটার রোল Srk প্লে করতে পারে বলে সবার ধারণা। বাট যেই হোক না কেন তার কাছে পাশুপত অস্ত্রের পাওয়ার থাকার সম্ভাবনা বেশি। বাট কেউ হাতে থাকা ত্রিশুলটাকে পাশুপত অস্ত্র মনে করবেন না। ওটা শিব ঠাকুরের পার্সনাল অস্ত্র ত্রিশুল। পাশুপত অস্ত্র এটা আরো পাওয়ারফুল শুধু মাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনে এটা ব্যবহার করা হয়।

উপরোক্ত অস্ত্রগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে দেবতারা রাক্ষসদের মারার জন্য ব্যবহার করত এবং মহাভারতের যুদ্ধেও ব্যবহৃত হয়েছিল।

এছাড়া মুভিতে প্রকৃতির চারটি এলিমেন্ট ভুমি, জল,অগ্নি,বায়ুরও রেফারেন্স আছে,এই চারটি উপাদান হিন্দু মিথোলোজিতে অনেক গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে।

তো এ সব অস্ত্রের বাপ হচ্ছে ব্রহ্মাস্ত্র। বাকি অস্ত্রের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিরা এই অস্ত্রকে জুনুন নামক এক অশুভ শক্তির কাছ থেকো প্রোটেক্ট করতেছে যাতে সে সেটাকে কোনো খারাপ কাজে ইউজ করতে না পারে। এটাই মুভির আসল প্লট।

তো মিথোলোজি থেকে এত কথা বলার একটা করণ যাতে মুভি দেখতে মনে আরো ইন্টারেস্ট জাগে। কারণ অন্য ধর্মাবলম্বীরা বেশিরভাগই হয়ত বিষয়গুলো জানেন না। তাই জানিয়ে দিলাম। মুভিটাকে অনকে প্রমিসিং মনে হচ্ছে, যাই হোক বাকিটা সেপ্টেম্বরে বোঝা যাবে।

BRAHMÂSTRA Movie Trailer:
#হিন্দু_মাইথোলজিকে কেন্দ্র করে এই সিনেমার কাহিনি সাজানো হয়েছে তা ট্রেইলার দেখেই সহজে বোঝা যায়। ট্রেইলার যথেষ্ট শক্তিশালী মনে হলো। VFX এর কাজকে কোনোভাবেই দুর্বল বলা যাবে না। কোনো ভালো জিনিসকে দুর্বল বললেই বড় ক্রিটিক্স হওয়া যায় না। ক্রিটিসিজম করার আগে অনুরোধ থাকবে এর VFX টিমের লোকগুলোকে একবার দেখে আসুন, সাথে তাদের করা কাজগুলোও দেখতে ভুলবেন না। তাই বলব, আপনারা যেটা পারেন সেটা হলো এই ট্রেইলারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে। সেটা না করে অনেককেই দেখা যাচ্ছে নকল, গরীবের মার্ভেল/ডিসি ইত্যাদি বলে টক্সিক মন্তব্য ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। এটা মোটেও ভালো মনমানসিকতার লক্ষণ নয়। 
ব্রাহমাস্ত্রা মুভি রিভিউ BRAHMaSTRA Movie Review
(image credit: Fox Star Studio)

গ্রুপে ট্রেইলারের পোস্টে যেসব সমালোচনামূলক মন্তব্য দেখলাম সেগুলোর একটিকেও গঠনমূলক সমালোচনা বলা চলে না। 
#কয়েকটি_অযৌক্তিক_সমালোচনা:
১. কেউ একজনকে দেখলাম ভগবান শিবের ছবি স্ক্রিনশট দিয়ে বলছেন, জাপানের কোন একটা এনিম্যাশনের ক্যারেকটার থেকে নাকি নকল। মানে ভাই, সিরিয়াসলি? জাপানের সেই এনিম্যাশন কবে তৈরি হয়েছে আর উপমহাদেশে বেদ কবে এসেছে তার কোনো ধারণা কি এই সমালোচকের আছে? ভগবান শিবের ছবি আর কোনোদিন কি এই লোক দেখেননি? নাকি জন্ম নেওয়ার পরেই জাপানের সেই এনিম্যাশন দেখেছিলেন?
২. মৌনি রয় নাকি গরীবের ওয়ান্ডা। আপাতদৃষ্টিতে কথাটি ঠিক মনে হয়।

কিন্তু মৌনি রয়-এর সকল পাওয়ার সম্পর্কে না জেনে শুধু লুক দেখে তড়িঘড়ি করে একটা কথা বলে ফেললেই সেটা স্মার্টনেস না। হুট করে কোনো ভার্ডিক্ট দেওয়ার জন্যে মুভিটা অন্তত দেখা প্রয়োজন। কিছুদিন আগে যখন #Black_Adam-এর ট্রেইলারে #Hawkman-এর ক্যারেক্টার রিভিল হলো, কই তখনতো কাউকে বলতে দেখলাম না যে এইটা তো গরীবের #Falcon. কেন বলা হলো না? সম্ভবত উনারা #DC ফ্যানদের ভয় পান। (উল্লেখ্য, আমি একজন মার্ভেল ফ্যান।😎)

৩. কেউ কেউ বলছেন, “মনে হচ্ছে মুভির কাহিনিটা কোথাও থেকে নকল করা হয়েছে। এখন ঠিক মনে পড়ছে না কোন কাহিনি।” এই লোককে সম্ভবত রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করার জন্যে। তাই তার কথা কিছু বললাম না। 
৪. অনেকে বলছেন, ব্রাহমাস্ত্রা মার্ভেল/ডিসি থেকে অনুপ্রাণিত। আমিও বলব, হ্যাঁ ভাই। আমি জানি না অনুপ্রাণিত কিনা। তবে অনুপ্রাণিত হওয়াকে নেগেটিভ ভাইব হিসেবে উপস্থাপন কেন করা হচ্ছে? অনুপ্রাণিত হওয়া আর নকল করা তো এক জিনিস না। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের সুরও তো রবী ঠাকুর সম্পূর্ণ ধার নিয়েছেন। এই সুরের মূল স্রষ্টা তো বাউল গগন হরকরা! তাতে কি আপনারা জাতীয় সঙ্গীত বয়কট করেছেন?
এমন আরও অনেক অযৌক্তিক সমালোচনা দেখলাম যার কোনো ভিত্তি নাই। এখন আসা যাক ট্রেইলারের কিছু #গঠনমূলক_সমালোচনায়:
১. VFX এক কথায় অসাধারণ! তবে একটি দিক: ট্রেইলার ডার্ক হওয়া সত্ত্বেও পাওয়ার-লাইট (লাল,নীল) এত রঙিন দেখানোতে একটু বেমানান মনে হয়েছে। 
২. ট্রেইলারের সবচেয়ে দুর্বল দিক: এর বিজিএম। এত বিগ বাজেটের একটা মুভিতে বিজিএম, সাউন্ড এবং ডাইলগ অতি মাত্রায় দুর্বল মনে হলো। অনেকে এই মন্তব্য করেছেন যে,টিভি সিরিয়ালের ট্রেইলার। এই কথার সাথে দ্বিমত হয়ে বলব, ট্রেইলার নয় কিন্তু এর বিজিএম, ডাইলগ টিভি সিরিয়ালের মতোই লেগেছে আমার কাছে। 
৩. কাস্ট-চুজিং (রনবীর-আলিয়া) ও বেশি ভালো মনে হয়নি। রনবীরের ফিটনেস আরও দারুণ করা প্রয়োজন ছিল। তবে আশা রাখা যায় তিনি তার অভিনয় দিয়ে আমাদের মন ভোলাবেন। ট্রেইলারে যতটুকু দেখা যায় তাতে মৌনি রয়-এর সমালোচনা করা যায় তেমন কিছু পেলাম না। তাই হুট করে আকাশ থেকে ওর সমালোচনা নিয়ে এসে কুল সাজার দরকার আছে বলে বোধ করছি না। 
ব্রাহমাস্ত্রার জন্য শুভ কামনা। ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রির মোড় ঘুরে যাক। ছোটবেলা থেকে যে ইন্ডাস্ট্রি দেখে বড় হয়েছি সেই ইন্ডাস্ট্রি তার আপন মর্যাদায় ফিরে আসুক এই কামনা করি। 🖤
ট্রেইলার রেটিং: ৭.৫

একটু কনফিউশান ক্লিয়ার করে দিয়ে গেলাম কোনটা কী।

পাশুপতঃ মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে অর্জুন পান। কুরুক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়নি। অশ্বত্থামা কে মারতে ধনুকে জুড়লেও পরে ব্যাসদেবের আর্জিতে ফিরিয়ে নেন।

ব্রহ্মশিরঃ কোনো বংশ ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। অশ্বত্থামা পান্ডব বংশ ধ্বংস করার জন্য ছাড়েন। অভিমন্যুর সন্তান পরীক্ষিত কে গর্ভের ভেতরই ফিটাস অবস্থায় হত্যা করে। পরে শ্রীকৃষ্ণ জীবিত করে দেন।

বৈষ্ণবঃ কেবল বিষ্ণু এ অস্ত্রের যন্ত্রণা নিতে পারতেন। ভগদত্ত অর্জুনকে মারার জন্য ছাড়েন। শ্রীকৃষ্ণ নিজের বুক পেতে গ্রহণ করে অর্জুনকে সেভ করেন।

নারায়ণীঃ অস্ত্র যার হাতে থাকবে তাকেই এ অস্ত্র ধূলিসাৎ করবে। অশ্বত্থামা দ্রোণের মৃত্যুতে শোকে পাগল হয়ে এ অস্ত্র ছাড়েন। শ্রীকৃষ্ণ পান্ডবপক্ষের সকলকে অস্ত্র ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে নারায়ণী ব্যর্থ করে দেন।

একাঘ্নীঃ কেবল একজনকে মারতে সক্ষম সে যেই হোক না কেন। অর্জুনকে মারার প্ল্যান থাকলেও কর্ণ ঘটোৎকচের ওপর ব্যবহার করেন ও অর্জুন বেঁচে যান।

অর্ধচন্দ্রঃ অর্জুন এ অস্ত্র ছুঁড়ে ভগদত্তের মস্তক ছিন্ন করেন। ভগদত্ত নারায়ণভক্ত হওয়ায় শ্রীকৃষ্ণ ছুটে গিয়ে মস্তক নিজ কোলে ধারণ করেন, মাটিতে পড়তে না দিয়ে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *