ইন্টারস্টিলার মুভি রিভিউ interstellar movie Review

ইন্টারস্টিলার মুভি রিভিউ

ইন্টারস্টিলার ফিল্মের বিভিন্ন বিষয়, যা জানা থাকলে ফিল্মের প্রায় মূল বিষয়গুলো খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারবেন। 
– মুভিতে একটি প্যারাডক্স ছিল। হয়তো আপনি সেটি নিয়ে ভাবেন নি। পোস্টের শেষে পড়ে নিবেন!
♦️♦️FUll SPOILER ALERT♦️♦️
ইন্টারস্টিলার মুভি রিভিউ
(image credit: WarnerBros)
সাইন্স ফিকশন মুভি জগতে ইন্টারস্টিলার মুভির নামটি সবার মুখে মুখে। কিন্তু, মুভির বিষয়গুলোর সাথে আমরা কেউই তেমন পরিচিত নই। মুভিটি বানানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ই হলো আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করা। মুভিটি দেখে আপনি হয়ত কিছু বিষয় বুঝেছেন, আবার অনেক বিষয় ই বুঝেন নি অথবা এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, নিচের বিষয়গুলো আশা করি এই ফিল্মের সাইন্স সম্পর্কে আপনার ধারণা অনেকাংশেই সহজ করে দিবে।
▪Dystopian Future | ডিস্টোপিয়ান ফিউচারঃ-
মুভির প্রথমেই এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায়। পৃথিবী যখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে, তখন মানুষ অন্য গ্রহের সন্ধান করে বেঁচে থাকার তাগিদে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মানুষ প্রাণপন চেষ্টায় বেঁচে থাকার যে প্রবনতা দেখা যায় তা হলো ডিস্টোপিয়ান ফিউচার এর নিদর্শন।
সাধারনত পৃথিবীতে যখন খড়া , ঝর তুফান , তাপমাত্রা বেড়ে যায় অথবা কোন রোগ বালাই এর কারণে মানব সভ্যতা ধ্বংসের পথে, এমতাবস্থায় সাইন্সের ভাষায় মানুষ একে ডিস্টোপিয়ান ফিউচার বলেই মনে করে। ইন্টারস্টিলার ফিল্মে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছিলো। এইজন্যই মুভিতে নতুন গ্রহের সন্ধানে গিয়েছিলো।

▪️Apollo Mission | অ্যাপোলো মিশনঃ-

অ্যাপোলো মিশন সম্পর্কে তো সবাই ই পড়েছি বই এ। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত চাঁদের বুকে পা রাখার যে অভিযান চালানো হয়েছিল বা মিশন হয় , সেটাই অ্যাাপোলো বা এ্যাপোলো মিশন। 

▪️Apollo Controversy | অ্যাপোলো কন্ট্রোভার্সিঃ-

সর্বপ্রথম চাঁদে পা রাখার ব্যাপারটাকে অনেকেই ভুয়া বলে দাবি করেন। বিভিন্ন দেশে এই ব্যাপারটিকে ভুয়া বলেছেন এবং নাসা র একটি মিথ্যে সাজানো নাটক বলেও দাবি করেছেন। আবার অনেকেই সত্য মনে করেন। রাশিয়া , জার্মানী এবং আমেরিকার মাঝে এই বিবাধটি ছিল। একেই অ্যাপোলো কন্ট্রোভার্সি বলা হয়। 
▪️Morse Code | মোর্স কোডঃ-
মোর্স কোড হলো যোগাযোগের একটি সাংকেতিক ভাষা। ১৮৩৬ সালে স্যামুয়েল মোর্স নামক আমেরিকান এক বিজ্ঞানী এটি আবিষ্কার করেন। ডট (.), ড্যাশ (-) এবং স্পেস ( ) ইত্যাদি দিয়ে ভাষা তৈরির মাধ্যমে যোগাযোগ কর হয়। যেমন:
. _ = A , _ . . . = B এবং _._. = C ইত্যাদি। শব্দ, আলো বা ক্লিক, ইত্যাদির মাধ্যমে মোর্স সংকেত তৈরীর মাধ্যমে মোর্স রিডাররা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে পূর্বে যোগাযোগ করা হতো। এখনো এটি বিভিন্ন যন্ত্রে ব্যবহার করতে দেখা যায়। ইন্টারস্টিলার মুভিতে ঘড়ির কাটার মাধ্যমে যে সংকেত দেওয়া হয়েছিল, সেটাই মোর্স কোড ছিল। 
▪️Poltergeist | পোলটারগাইষ্টঃ-
এই ব্যাপারটিকে আমরা গ্রামের ভাষায় ছায়াভূত ও বলে থাকি। এটি হচ্ছে একটি ভৌতিক অবয়ব যাকে ইংরেজিতে Noisy Ghost বা Disturbing Object বলা হয়। বস্তুর ফিজিক্যাল ডিস্টার্বেন্স অর্থাৎ বস্তুর অবস্থানগত সমস্যা তৈরি করে। এটি ঘরের এক জায়গার জিনিস পত্র অন্য জায়গায় সরিয়ে দেয়, 
উল্টেপাল্টে করে রাখে। বাস্তবে যদিও এটির অস্তিত্ব নেই। মুভিতে অভিনেতার মেয়ে ভাবতো তার ঘরে ভূত আছে। এটাই সেই ভূত এর ডেফিনেশন। সেটাই পোল্টারগাইস্ট ছিল। তাছাড়া বস্তুর অবয়ব বা ছায়াকে যখন ভূত প্রেত এর ন্যায় কিছু কল্পনা করা হয়, সেটিও এটিই।
▪️Binary Code | বাইনারি কোডঃ-
এই বয়সে কি আপনাদের আর বাইনারি কোড শেখানো লাগবে? আমরা দুনিয়ায় যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ইউজ করি, সবই বাইনারিতে কোডিং করা। বাইনারি কোড হলো ডিজিটাল ডাটা বা সিগন্যাল এনকোডিং এবং ডিকোডিংয়ের একটি পদ্ধতি যা 0 এবং 1 দিয়ে তৈরি করা হয়! 
Letter -ASCII – Code Binary
=====================
A – 065 – 01000001
B – 066 – 01000010
C –  067 – 01000011
D  – 068 – 01000100
এভাবে A-Z এবং 0-9 পর্যন্ত সবই বাইনারির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় এবং একে অন্যের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। আপনি জেনে অবাক হবেন যে কম্পিউটার ফোন ল্যাপটপ , সব ধরনের ডিভাইস শুধুই ০ এবং ১ ছাড়া অন্য কোন ভাষাই জানেনা। কারণ, আপনাকে ব্যতিতীত কম্পিউটার এবং ফোন, এরা সব মূর্খ। 
▪️Geographic Co Ordination | জিওগ্রাফিক কো-অরডিনেশনঃ-
এটাকে বলা হয় স্থানাংক। গুগল ম্যাপস ইউজ করার সময় ম্যাপ এর পাশে এগুলো উঠে। যেমন ঢাকা শহরের কোন একটি অবস্থানের কো-অরডিনেটস হলো Latitude: 23.777176, Longitude: 90.399452। মুভিতে অভিনেতা NASA তে যায় এই স্থানাংক পেয়ে। আপনি ফোনে গুগল ম্যাপস ওপেন করলে এগুলো ইজিলি দেখতে পারবেন।
আপনি Latitude: 23.777176, Longitude: 90.399452 এটি লিখে গুগলে সার্চ দিন। দেখবেন ঢাকা’র লোকেশন দেখাবে। 
▪️Black Hole | ব্ল্যাক হোলঃ- 
মহাকাশের স্পেস এবং সময়ের কম্বিনেশনে এমন এক গ্রাভিটি বা অবস্থার সৃষ্টি হয় যেখানে কিছু ঢুকলে আর বের হতেই পারেনা। আলো ও বের হতে পারেনা। এতো শক্তিশালী এর আকর্ষন। এটি সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করলে অনেক আর্টিকেল পাবেন। বিস্তারিত অনেক বিষয় রয়েছে ইন্টারনেটে। 
▪️Project Endurance & Rangers | প্রোজেক্ট এন্ডুরেন্স এবং রেঞ্জার্সঃ-
ফিল্মে প্রোজেক্ট এনডুরেন্স হলো দশ বছর আগে ব্যর্থ হওয়া ‘রেঞ্জার্স মিশনের একটি অংশ’। আর ১২ টি মহাকাশযান যেই মূল স্টেশনে যুক্ত থাকবে তার নামও এন্ডুরেন্স দেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রোজেক্ট রেঞ্জার্সে ১২ টি মহাকাশযানে করে ১২ জন মহকাশচারী মনুষ  বসবাসযোগ্য গ্রহগুলো খুঁজার জন্যে মহাকাশে যায় যেখান থেকে মিলার, এডমুন্ড এবং ম্যান পৃথিবীতে ডেটা পাঠিয়েছেন! মুভির প্রথম ভাগে আমরা এই বিষয়গুলো দেখতে পেয়েছি। 
▪️Wormhole | LightSpeed | ওয়ার্মহোল এবং লাইটস্পিডঃ-
আমরা এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় সময়ের স্বল্পতার জন্য শর্টকাট রাস্তা অবলম্বন করি। তেমনি মহাকাশে এক স্থান হতে অন্য স্থান কোটি কোটি মাইল দূরে। সেখানে যদি আলোর গতিতে যাওয়া যায় , তাহলে দ্রুত যাওয়া সম্ভব। এটাই লাইটস্পিড। আলোর গতিতে ভ্রমন।
 আর ওয়ার্মহোল হলো শর্টকাট রাস্তা। আমি ঘুরে না গিয়ে কোণাকুণি গেলে আগে যেতে পারবো। তেমনি এরকম শর্টকাট মহাকাশে ইউজ করাকেই বলে ওয়ার্মহোল। মুভিতে ওয়ার্মহোল ইউজ করা হয়েছিল সময়ে বাঁচাতে এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে দ্রুত যাওয়ার জন্য। এটা কিছুটা ছায়াপথ এর মত। ফিল্মে ওয়ার্মহোল দিয়ে যাওয়ার পূর্বে কুপার কে ওয়ার্মহোল সম্পর্কে একটি কাগজ দিয়ে খুহ সহজেই বুঝানো হয়। আপনিও ওই সিনটি দেখলেই বুঝে যাবেন।
▪️Human Transportation | হিউম্যান ট্রান্সপোর্টেশনঃ-
নতুন গ্রহে পুরনো সভ্যাতার জীবন স্থানান্তর। ফিল্মে প্ল্যান এ এবং প্ল্যান বি নামে দুটি প্ল্যান থাকে তাদের। নিন্মে বিস্তারিত বলা হলো।
Plan A = Harness Gravity
ফিল্মের থিওরি অনুসারে যদি গ্রাভিটির ইকুয়েশন বের করা যায় তাহলে সেই ইকুয়েশন কে কাজে লাগিয়ে বড় বড় মহাকাশযান বানিয়ে সেগুলোতে পৃথিবীর মানুষকে পাঠানো গেলে পৃথবীর সবাইকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু, গ্রাভিটির বিপরীতে যেতে হলে প্রয়োজন জটিল সব কোয়ান্টাম ইকুয়েশন। আর তাহলেই গ্রাভিটির বিপরীতে গিয়ে মহাকাশযানে করে মানুষকে পাঠানো যাবে। 
Plan B = Population Bomb
৫০০০ ফার্টিলাইজড হিউম্যান ভ্রুণ সংরক্ষন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশ হতে। এগুলো নিয়ে গিয়ে অন্য গ্রহে ৩০ বছরের মধ্যে নতুন গ্রহে মানব কলোনি স্থাপিত করবে। মানে নতুন উপযুক্ত কোন গ্রহ পেলে সেখানে এই ভ্রুণ হতে বাচ্চা উৎপাদন করে সেখানে মানব সভ্যতা গড়ে তোলা হবে। ফিল্মের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু এটাই ছিলো।
▪️Planet Timeline | প্ল্যানেট টাইমলাইনঃ-
এক গ্রহের ১ ঘন্টা আরেক গ্রহের ৭ বছর বা ১০ বছর বা ১২ বছর। একে টাইমলাইনের হিসেবে ধরা যেতে পারে। তবে একবার কোন গ্রহে সময় অতিবাহিত করলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যাবেনা। মুভিতে মিলারস গ্রহে এই টাইমলাইনেই তারা অতিরিক্ত সময় কাটিয়েছে। 
আমরা ফিল্মের ডায়লগগুলো একটু খেয়াল করলেই কিন্তু বুঝে যাবো।
▪️Dimension | ডাইমেনশনঃ-
3D র সাথে আমরা সকলে পরিচিত। থার্ড ডাইমেনশন বলে যাকে। এই অবস্থায় যেকোন বস্তুর ৩টি দিক আমরা আনুভব করি বা দেখি। তা হলো দৈর্ঘ , প্রস্থ এবং উচ্চতা। কিন্তু, এই মুভিতে ৪র্থ এবং ৫ম ডাইমেনশন ও দেখানো হয়েছে যা যথাক্রমে টাইম এবং গ্রাভিটি। 
৪র্থ ডাইমেনশন তথা সময়ঃ-
এটি হলো সময় নিয়ে এক খেলা। মহাবিশ্বের বস্তুর উপর দৈর্ঘ , প্রস্থ এবং উচ্চতা র মত যদি সময় ও আরোপ করা যায় , তাহলে তা হবে ৪র্থ ডাইমেনশন। এবার আপনার প্রশ্ন হতে পারে যে সময়ের সাথে বস্তুর সম্পর্ক কি? 
ধরুন আপনার কাছে ১০টাকা আছে। সেটা আমায় দিলেন। আমি দিয়ে দিলাম অন্য কাউকে। সে আবার দিয়ে দিল অন্য কাউকে। এবার আপনি জানতে চাচ্ছেন যে এই ১০টাকা কখন কার কার কাছে দেওয়া হয়েছে।
যদি জানতে চান কখন কখন দেয়া হয়েছে = সময়। এক্ষেত্রে আপনি সময় কে স্পেস এর থার্ড ডাইমেনশনে আরোপ করলেন। মানে প্রতিটি ডাইমেনশন তার পূর্বের ডাইমেনশন এর সাকসেসর।
৫ম ডাইমেনশন তথা গ্রাভিটিঃ-
এবার যদি আমি সময়ের সাথে সাথে গ্রাভিটি ও আরোপ করি। তাহলে? তখন আপনি কখন , কোথায় এবং কোন অবস্থায় কাকে ১০টাকা দিয়েছি আমি , আপনি সব দেখতে পারবেন। 
তেমনি মুভিতে কুপার কিন্তু তার মেয়েকে টেসারেক্ট এ গিয়ে তার মেয়ের বিভিন্ন বয়সের লক্ষ লক্ষ অবস্থা দেখতে পারছিল। যেকোন সময় এবং যেকোন স্থান। (এভাবেই কুপার তার মেয়ের কাছে কোয়ান্টাম ডাটা সাপ্লাই করেছিলো) 
নোটঃ- একমাত্র ৫ম ডাইমেনশনের গ্রাভিটি সকল ডাইমেনশন এর উর্ধে। ৫ম ডাইমেনশনে পূর্বের সকল ডাইমেনশন ও বিদ্যমান এবং এটি ৪র্থ ডাইমেনশনের উপর প্রয়োগ হয়।
▪️Murphy’s Law | মারফি’স লঃ-
 মার্ফি নামক একজন এই সুত্র উদ্ভাবন করেন। সাধারনত কোন কিছু খারাপ ঘটার সম্ভাবনা এবং তা ঘটাকে মার্ফি’স ল হিসেবে আখ্যায়িত করে। এটি গুগলে সার্চ করলে ডেফিনেশন পেয়ে যাবেন সহজেই। 
▪️Space Gravitational Singularity | স্পেস গ্রাভিটেশনাল সিঙ্গুলারিটিঃ-
মুভিতে এই ব্যাপারটি ই সবচেয়ে অসাধারন। ৫ম ডাইমেনশন এটিই। মহাবিশ্বের কোথাও কোথাও এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি (গ্রাভিটি) অসীম হয়ে থাকে।
গ্রহের আকারের উপর নির্ভর করবে তার মহাকর্ষ। যেমন , যে গ্রহ বা যে বস্তু যতো বড়, এবং যতো কাছাকাছি থাকবে, তার আকর্ষন ক্ষমতা কিন্তু ততো বেশি। যেমন চাঁদ যখন পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে, তখন পৃথিবীতে বেশি বেশি জোয়ার হয়। নদীর, সাগরে পানি বেড়ে যায় বিভিন্ন স্থানে বা দেশে। 
কিন্তু, যদি গ্রাভিটেশনাল সিঙ্গুলারিটি থাকে তবে সেখানের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অসীম হবে। 
ব্ল্যাক হোল এর মাঝে টেসারেক্ট বানিয়ে সেখানের গ্রাভিটি অসীম করে দেয়া হয়। অর্থাৎ ব্ল্যাকহোলের ভেতরে ৫ম ডাইমেনশান রয়েছে। আর আগেই বলেছি। ৫ম ডাইমেনশন থাকা মানে ৪/৩/২/১ সকল ডাইমেনশন ও থাকবে।
এতে যে কেউ ৫ম ডাইমেনশনে থেকে ৩য় ডাইমেনশনের যেকারো অবস্থান দেখতে পারবে এবং সংকেত ও দিতে পারবে। চাইলে তথ্য ও আদান প্রদান করতে পারবে। ৩য় ডাইমেনশন হচ্ছে আমাদের বর্তমান রিয়্যালিটি। 
মুভিতে কুপার কিন্তু ৫ম ডাইমেনশনে থাকা অবস্থায় মোর্স কোড দিয়ে কোয়ান্টাম ডেটা পাঠিয়েছিল তার মেয়ের ঘড়ির কাটার সিগন্যাল হিসেবে। 
▪️Gravitational Slingshot (Assist) | গ্রাভিটেশনাল স্লাইংশট (অ্যাসিস্ট)ঃ-
অন্য গ্রহের আকর্ষন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মহাকাশ পাড়ি দেওয়াটাকেই মূলত গ্রাভিটেশনাল স্লাইংশট বলা হয়। এটি অনেকটা চুম্বক দিয়ে লোহাকে আকর্ষন করার মতো বিষয়।
ধরুন আপনি চুম্বক দিয়ে একটি লোহার টুকরাকে কাছে টানছেন। পৃথিবীর সকল গ্রহের ই মহাকর্ষণ শক্তি আছে। যার ফলে এটি তার কাছাকাছি সকল বস্তুকেই আকর্ষণ করে। এর জন্যই কিন্তু আমরা মাটির সাথে লেগে আছি, উপরে কিছু ছুড়ে মারলে নিচে এসে পড়ে। 
▪️Tesseract | টেসেরেক্ট / টেসারেক্টঃ- 
ব্লাকহোল সম্পর্কে উপরে বলেছিই। ব্ল্যাকহোলের ভেতরের অবস্থাকে টেসারেক্টের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এই অবস্থায় সেখানে ৫ ডাইমেনশন এবং ৩ ডাইমেনশান একসাথে বিদ্যমান।
মানে সেখানে বর্তমান ভবিষ্যত দুইটাই রয়েছে। আমি অলরেডি উপরে বলে দিয়েছি এ ব্যাপারে। মূলত ৫ম ডাইমেনশন রয়েছে টেসারেক্ট এ। টেসারেক্টে যেকোন বস্তুর যত ইচ্ছে তত অবস্থান দেখা যাবে। কুপার তার মেয়ের লক্ষ লক্ষ অবস্থা দেখেছিল। এটিই টেসারেক্ট ছিল। 
▪️Space Habitat | স্পেস হ্যাবিটাটঃ-
উপগ্রহ বুঝেন? যেমন চাঁদ একটি উপগ্রহ। কারণ, এটি আমাদের গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরে। তেমনি কোন স্পেসস্টেশন বা স্পেসশিপ বা মহাকাশযান যদি কোন গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরে , তখন সে অবস্থাকে স্পেস হ্যাবিটাট বলা হয়।
মুভির শেষে মানব জাতি নিজেদেরকে একটি কৃতিম গ্রহে নিয়ে গিয়েছিল। কারণ, পৃথিবী ততোদিনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে গিয়েছিল। শেষের কৃতিম গ্রহ টাই স্পেস হ্যাবিটাট। কারণ, ওই কৃতিম গ্রহটা একটা স্পেসশিপ ছিলো। 
╠═══ প্যারাডক্স ═══╣
আপনি খেয়াল করেছেন কি না , ইন্টারস্টিলার মুভিতে প্যারাডক্স ছিল। কুপার যখন টেসারেক্ট এ ছিল মানে ৫ম ডাইমেনশনে, তখন সে জানতে পারে যে, তারা মনে করতো মহাকাশে ব্লাক হোল আছে আর এই টেসারেক্ট হয়তো উন্নত কোন সভ্যতা বানিয়েছিলো (এলিয়েন)।
কিন্তু অবাক করার বিষয় এই যে, এগুলো সব বানিয়েছিলো আধুনিক মানব সভ্যতা। মানে তাদের ই নতুন প্রজন্ম। তাদের নতুন প্রজন্ম প্রকৃতির-গ্রাভিটির কোয়ান্টাম ডেটা পেয়ে গিয়েছিলো। তাই তারা এগুলো বানিয়েছে পূর্ব প্রজন্মের জন্য যাতে তারা কোয়ান্টাম তথ্য পেতে পারে। 
এবার প্যারাডক্স উঠে আসে এটাই যে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবন হুমকিতে ছিলো যার কারণে অতীতে কুপার কে দিয়ে কোয়ান্টাম তথ্য অতীতে কুপারের মেয়েকে পাঠিয়েছে তাদের পূর্ব প্রজন্ম রক্ষা করতে। যদি তাদের জীবন ই হুমকিতে ছিল , তাহলে তারা পয়দা হল কিভাবে? 
যেহেতু ধ্বংসের মুখে ছিলো পুরো বর্তমান মানব সভ্যতা। আর যদি তারা (ফিউচারের মানুষ) কোয়ান্টাম তথ্য পেয়ে থাকে = তারা তো নিরাপদ তখনো। যেহেতু তারা বেঁচে আছে, সেজন্যই তো কোয়ান্টাম ডেটা পেয়েছে। তারা যদি বেঁচেই থাকে , তাহলে তারা কেনো তাদের পূর্ব প্রজন্মকে বাচানোর চেষ্টা করছে? কারণ, পূর্ব প্রজন্ম বেঁচে আছে বলেই তো তারাও বেঁচে আছে। তাহলে অতীতের মানব সভ্যতাকে কি দরকার এতো হেল্প করার?
এ থেকে এটাই বুঝা যায় যে , এটিও একট ক্যাজুয়াল লুপ। সম্পূর্ণ মুভিটিই হয়তো প্যারাডক্স যার কোন অরিজিন পয়েন্ট নেই। এটি এভাবেই চলছে এবং আদৌ এই ফিল্মের শুরু কোনটা, শেষ কোনটা, কেউই জানেনা।
সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত মতামত এটি আমার। 
╚●► ফিল্মটি সম্পর্কে কিছু কথা ◄●╝
এবার মুভিটা নিয়ে কিছু বলা যাক। দেখুন, প্রথমেই একটি কথা বলবো। মুভিটি যেহেতু সাইন্স ফিকশনাল, তাই মুভির বেশিরভাগ ব্যাপার ই শুধুমাত্র ধারনা হতে তৈরি। এই মুভিতে যা যা দেখানো হয়েছে , তা শুধু মানুষের ধারনামাত্র। বৈজ্ঞানিক থিওরি।
আজ পর্যন্ত এসব থিওরি প্রমাণ হয় নি আর হবেও কিনা সন্দেহ। তাই মুভিটি দেখে আপনি হয়তো শিখতে পারবেন না কিছুই, কারণ বাস্তবে তো এসবের অস্তিত্ব ই নেই। তবে হ্যাঁ, বুঝার মতো এবং জানার মতো অনেক কিছুই আছে যা আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করবে এই পৃথিবী সম্পর্কে। 
ভুল ত্রুটি থাকলে মাফ করবেন। আমি কোন বিজ্ঞানী ও নই বা ক্রিটিক ও নই। সম্পূর্ণ বিষয়গুলো ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা হতে লিখা এবং ঘেটে ঘেটে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার পর, দেখার পর লিখেছি। হয়তো অনেক বিষয় ভুল ও থাকতে পারে।
তাই ভুল ত্রুটি থাকলে অত্যন্ত বিনয়ের সহিত ধরিয়ে দিবেন। আর যদি সবজান্তা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চান কমেন্টে , প্লিজ এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজন নেই আপনার কাছে কিছু শেখার। দয়া করে নম্রতার সহিত ভুল ত্রুটি সংশোধন করে দিবেন।

Leave a Comment

Total Views: 348

Scroll to Top