dour review - দৌড়- মোশারফ করিমের ওয়ান ম্যান শো
|

দৌড়- মোশারফ করিমের ওয়ান ম্যান শো

নো স্পয়লার 
দৌড়- মোশারফ করিমের ওয়ান ম্যান শো 
দৌড় সিরিজের ট্রেলার যারা দেখেছেন, তাদেরকে নতুন করে গল্প বলার কিছু নেই। যারা দেখেননি, তাদের জন্য একবার বলা যায়। 
অহনা গ্রুপের এমডি রুহুল আমিনের গাড়ি চুরি হয়েছে। পুলিশের কাছে কমপ্লেইনের পর তার ম্যানেজার আকমল জানান, গাড়িতে এমন কিছু কাগজ ছিল যা পুলিশ পেলে রুহুল আমিনের জেলও হতে পারে। রুহুল আমিন ভাড়া করা গুন্ডা নিয়োগ করেন আলাদাভাবে, তারা যেন পুলিশের আগেই সেই গাড়ি খুঁজে বের করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে৷ এরপরেই তিনি জানতে পারেন, তার ছেলে ঐ গাড়ির ডিকিতে। রুহুল আমিন কি পারবেন তার বাচ্চাকে বাঁচাতে? 
দৌড়- মোশারফ করিমের ওয়ান ম্যান শো Dour Series Review
ট্রেলার দেখে যারা ভেবেছিলেন, পুরো গল্পই বলে দেয়া হয়েছে- তারা ভুল করবেন। যা দেখানো হয়েছে সেটা প্রথম চার পর্বের গল্প বলা যায়। বাকি পাঁচ পর্বে  (মোট পর্বসংখ্যা ৯) আরও বাঁক আছে কাহিনীর। 
যা ভালো লাগেনি-
গল্পের আইডিয়াটা যতটা দারুণ, স্ক্রিনপ্লেটা সেভাবে জমে উঠেনি ; বিশেষ করে এপিসোড ৫ থেকে। চারজন মানুষ কেন গাড়িটা চুরি করলো, কেন এই চারজনই গাড়িটা চুরি করলো, তাদের সবার অতীত জীবনের একটা মোটামুটি লেভেলের আইডিয়া ৫ নম্বর এপিসোডেও দেখতে না পারলে হতাশ লাগে। 
চারজন গাড়ি চোরের অভিনয়। প্রধান চরিত্রগুলোর অভিনয় আসলে এতটাই ভালো, তার পাশে এই চারজনকে অনেকটা ম্লানই বলা যায়। উজ্জ্বল মাহমুদ কিছুটা বেটার সেই তুলনায়। 
পোস্ট প্রোডাকশনে তাড়াহুড়ো স্পষ্ট। ডাবিং অনেক জায়গায় মিলছে না। গাড়ি পোড়ানোর ভিএফএক্স বেশ দুর্বল। 
লাস্ট এপিসোডে যাকে দেখিয়ে চমক সৃষ্টি করা হলো, তার নাম শুরুরদিকে ক্রেডিটে না দিলেই সম্ভবত ভালো হত। সেক্ষেত্রে চমকের পরিমাণটা বাড়তো।
অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই। সেকেন্ড সিজনের জন্য জমিয়ে রাখলে ঠিক আছে, তবে এত বেশি প্রশ্ন জমা থাকলে বা একটা প্রোপার ক্লোজার না পেলে সাবস্ক্রাইবারদের হতাশ হওয়া বা রেগে যাওয়াটা অস্বাভাবিক লাগবে না। সব সেকেন্ড সিজনের জন্য জমিয়ে রাখার এই প্রক্রিয়া হিতে বিপরীত হলেই সমস্যা। 
যা ভালো লেগেছে-
গল্পের আইডিয়া দারুণ। একটি গল্প ধরে না এগিয়ে অনেক সাবপ্লট আনা হয়েছে আর সেগুলো এপিসোড ৪ পর্যন্ত ঠিকঠাক একটা গতিতে ছিল। নন লিনিয়ারভাবে গল্প বলার ভঙ্গি ভালো লেগেছে। 
রাতের দৃশ্যগুলোর দৃশ্যায়ন খুব ভালো।
বিজিএমের মিনিমালিস্টিক ব্যবহার ভালো লেগেছে। জোর করে থ্রিল দেয়ার জন্য অনেক সিকুয়েন্সে আরোপিতভাবে মিউজিক না দেয়াটা ভালো লেগেছে। 
রায়হান খানের প্রথম সিরিজ হিসেবে তার পরিচালনা ভালো। 
কিছু সংলাপ খুব ভালো। উদাহরণ- 
"মানুষ বদলায়। লোভে, ঘৃণায়, ভালোবাসায়" 
"-কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের করতে কে বলেছে আপনাকে?
– সাপ নিজে থেকে বেরিয়ে এলে আমি কী করব?
–  সাপকে মাটি চাপা দিয়ে রাখবেন!" 
যে জিনিসটার জন্য শেষ পর্যন্ত বসে ছিলাম- অভিনয়। 
মোশাররফ করিম অমানুষিক লেভেলের ভালো অভিনয় করেছেন। কী যে কমপ্লেক্স একটা ক্যারেক্টর দেয়া হয়েছে তাকে, আর কীভাবে যে সেটাকে প্লে করলেন করিম সাহেব!
লোভী, এরোগেন্ট, কথায় কথায় "দাঁত পড়ে যাবে কিন্তু" বলা (তবে সাধারণত গায়ে হাত তুলেন না তিনি)
কথায় কথায় নিজের ম্যানেজারকে অপমান করা, তুমুল গালিগালাজ করা আবার পরক্ষনেই তার সাথে ভালো ব্যবহার করা; 
পুলিশ, গুন্ডা, ডিবি কাউকে পরোয়া না করা আবার একই সাথে নিজের সন্তান হারিয়ে উন্মাদের মত আচরণ করা- এই সমস্ত লেয়ার একটি চরিত্রে আর এই সমস্ত কিছু দুর্দান্তভাবে তুলে ধরেছেন মোশাররফ করিম। 
হইচইতে এটি মোশাররফ করিমের দ্বিতীয় কাজ মহানগরের পর, কিন্তু ক্যারেক্টর হিসেবে ওসি হারুণের চেয়েও বেশি কমপ্লেক্স মনে হয়েছে আমার রুহুল আমিনকে। 
বাচ্চার কথা মনে করে "আমার ছেলের কাছে তো ইনহেলার নাই, গাড়িতে আমার ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে! আহারে, আহারে" বলে চিৎকার করে কেঁদে ওঠার সিনে মোশাররফ করিমের অভিনয় দেখে যেকোনো বাবার গুজবাম্প হবে। 
ইন্তেখাব দিনার দারুণ। সবচেয়ে বেশি কনফিউশান তৈরি করেছেন তিনি চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে, তার মতিগতি বোঝা দায়। তারিক আনাম খানকে এরকম চরিত্রে দেখে খুবই ভালো লেগেছে। কাম এন্ড কোয়াইট পুলিশ অফিসার চরিত্রে তিনি চমৎকারভাবেই মানিয়ে গেছেন। শাহেদ আলি সুজনকে ভিন্ন গেটাপে আর ভিন্ন উচ্চারণে কথা বলতে দেখে বেশ কনভিন্সিং মনে হয়েছে তবে তার স্ক্রিনটাইম আরেকটু বেশি হলে ভালো লাগতো। অশোক ব্যাপারি কিংবা "পারুল" চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী এক সিকুয়েন্সেই দারুণ। রোবেনা জুঁই কনভিন্সিং।
মোশাররফ করিমকে নিয়ে আরও কিছু কথা না বললে নিজের কাছেই খারাপ লাগবে। পুরো সিরিজটা শুধু তার জন্যই দেখা যায়। দৃশ্যের প্রয়োজনে গালি ব্যবহার করলেও তার গালি দেয়ার ভঙ্গিটা খুবই স্বতঃস্ফূর্ত। প্রেসারে পড়লেই রুহুল আমিন সিগারেট ধরান আবার সিগারেট শেষ করেই তিনি ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারেন- এইসব ছোটখাটো ডিটেলিং খুব ভালো লেগেছে। 
এত ভালো অভিনয়ের পরেও এই মানুষটা কেন এত এত কাজ করেন, সেটা ভাবলে আসলে ভক্ত হিসেবে অভিমান আসে। কী পরিমাণ যে ক্ষমতা এই মানুষটার, সেই ক্ষমতাকে অনেক বিলো এভারেজ স্ক্রিপ্টে নষ্ট হতে দেখলে কষ্ট লাগে। আমার মতে, এখন তার শুধুমাত্র ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কিংবা সিনেমায় কাজ করা উচিত। আর কত নাটক?
মোশাররফ করিমের কাছে এক্সপেক্টেশন বেড়ে গেলো দৌড়ে তার অভিনয় দেখে। আর জানি, এই এক্সপেক্টশন তিনি ফিলাপ করবেন ভালো গল্প আর চরিত্র পেলেই। 
পুনশ্চ- একটি দৃশ্যে তারিক আনাম খানের মহানগর সিরিজকে ট্রিবিউট দেয়াটা ভালো লেগেছে। 
তারিক আনাম খান- মা আর পুলিশের কাছে কিছু গোপন করবেন না। আমার কথা না, একটা ওয়েব সিরিজে দেখেছি।
মোশাররফ করিম- হ্যাঁ! আমি নিজেও এখন একটা ওয়েব সিরিজেই আছি 😂

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *