আ সং অফ আইস এন্ড ফায়ার – A Song of ice and fire
[জর্জ আর. আর. মার্টিনের ফ্যান্টাসি ‘আ সং অফ আইস এন্ড ফায়ার’- এর প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস]
A Song of Ice and Fire
________❄️🔥_______
1st Part
“স্পয়লার এলার্ট”
গেম অফ থ্রোন্স নিয়ে আমার অনুভূতি আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন। ২০১৯ সালে এর সাউন্ডট্রাকের মোহে পরে দেখতে বসেছিলাম সিরিজটি। এক সপ্তাহে সিরিজ শেষ করেও যখন তৃপ্ত হচ্ছিলাম না, তখনই খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছিলাম মার্টিনের এই ফ্যান্টাসি সম্পর্কে। সেসময় চার পর্বে এর বিশাল প্রেক্ষাপট নিয়ে পোস্ট করেছিলাম।
অতি সম্প্রতি এইচবিও ঘোষণা করেছে এই সিরিজেরই প্রিক্যুয়েল ‘হাউজ অফ দ্য ড্রাগন’ এর প্রিমিয়াম হতে যাচ্ছে তেসরা এপ্রিল। তাই ভাবলাম আরেকবার সেই পুরোনো পোস্টেই ঘষামাজা করে এবং নতুন করে ‘ড্যান্স অফ দ্য ড্রাগন’ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখবো। শেষ করতে হয়তো পুরো ৬/৭ টা পোস্ট লেগে যাবে। মাত্রাতিরিক্ত বড় পোস্ট পড়তে যাদের সমস্যা নেই এবং ‘গেম অফ থ্রোন্স’ যাদের ইমোশন তারা চলুন এপ্রিলের আগেই আমাদের অনুভূতিকে আরেকবার নাড়া দিয়ে আসি।
(image credit: HBO) |
বাহুল্য হিসেবে বলি, ‘A Game of Thrones’ হলো মার্টিনের ফ্যান্টাসি রচনা ‘A Song of Ice and Fire’ সিরিজের প্রথম বই। সিরিজের প্রথম বইতে হাত দিয়েছিলেন ১৯৯২ সালে। ইতিমধ্যে সিরিজের পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং সামনে দুটি বইয়ের মাধ্যমে মার্টিন এই ফ্যান্টাসি জগতের ইতি টানবেন। মার্টিন তার ফ্যান্টাসিতে ‘পয়েন্টস অফ ভিউ’ মেথড ব্যবহার করেছেন। গল্প বলার এই ধরণ আমার অত্যন্ত প্রিয়। প্রত্যেকটি ক্যারেক্টারেরই নিজস্ব গল্প, যুক্তি এবং আকাঙ্ক্ষার বর্ণনা পাঠককে টেনে ধরতে বাধ্য। অন্যান্য ফ্যান্টাসির সাথে A Song of Ice and Fire এর বড় পার্থক্য হলো বিশ্বাসযোগ্য কিছু এলিমেন্ট।
হ্যা অন্যান্য সব ফ্যান্টাসি রচনার মত এটাতেও জাদু, ভবিষ্যদ্বাণী এবং ড্রাগনের মত প্রানীর অস্তিত্ব থাকলেও মার্টিন তার ফ্যান্টাসিতে এত সচেতন ভাবে এগুলোর ব্যবহার করেছেন যে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে এটা কোনো কাল্পনিক জগৎ। তবে আজকের লেখার মার্টিনের গুনগান না করে চলে যাব তার ফ্যান্টাসি জগতের একদম শুরুতে, বিরক্তিকর ভূমিকার এখানেই সমাপ্তি।
Dawn Age || প্রভাতের যুগ
_____________
প্রাচীন যুগের মধ্যে প্রথম ধাপটা হলে ডন এজ। এই যুগের কোনো লিখিত রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তবে প্রচুর মিথ এবং গানের দ্বারা এ যুগের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর প্রমান পাওয়া যায়। ডন এজের সূচনা বর্তমান সময় থেকে ১২,০০০ AC (Aegon Conquest) অর্থাৎ এগনের রাজত্বের ১২ হাজার পূর্বের সময়। এগন এমন একটা চরিত্র যিনি ভবিষ্যতে সমস্ত ইতিহাস বদলে দিবেন। সময়মতো তার যথার্থ বর্ণনা দেয়া হবে। সমস্ত পৃথিবী তখন শুধু দুটো বিশাল ভাগে বিভক্ত ছিল। এসোস ও ওয়েস্টেরস। মাঝে বিশাল সমুদ্র। গল্পে মূলত ওয়েস্টেরসের দিকেই বেশি ফোকাস করা হয়েছে।
মিথ অনুযায়ী ১২,০০০ বছর পূর্বে মানুষ এসস থেকে অর্থাৎ সমুদ্রের অপর প্রান্ত থেকে ওয়েস্টেরসে আসে। সাথে করে নিয়ে আসে তাদের ধর্মবিশ্বাস এবং ব্রোঞ্জের হাতিয়ার। তারা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ‘আর্ম অফ ডর্ন’ নামক স্থল-ব্রিজ কে। তবে ওয়েস্টেরসে তাদের আগে থেকেই এক বিশেষ প্রজাতির বাস ছিল। তারা ছিল আকারে ক্ষুদ্র, নিরীহ ও শান্তশিষ্ট। কবে থেকে তার ওয়েস্টেরসে বাস করে, তাদের পূর্বজাতি কারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাদের একজন পূর্ণাঙ্গ প্রানীর সাইজ বাচ্চা মানুষের সমান। তাই ফার্স্ট মেনরা তাদের নামকরণ করে ‘চিলড্রেন অফ ফরেস্ট’ হিসেবে। তারা বসবাস করতো গভীর জঙ্গলে এবং গাছের ডালে বসে নিজেদের ভাষায় গান গাইতো যা তাদের ভাষ্যে ‘True Tongue’ নামে পরিচিত। শিকারের জন্য ব্যবহার করতো অবসিডিয়ান নামক একধরনের বিশেষ পাথর (সিরিজে যা ড্রাগনগ্লাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে) ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে তারা প্রকৃতিকে বিশ্বাস করতো। অর্থাৎ তারা মনে করতো প্রতিটা ঝর্ণা,পাথর, গাছ এগুলোর আত্মা রয়েছে। একত্রে এগুলোকে ওল্ড গডস বলতো। বিশেষ করে ওয়্যারউড নামক বৃক্ষটি তাদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার, এটা তাদের অনেক দেবতাদেরও একজন।
গ্রিনসিয়াররা (এরাও চিলড্রেনদেরই একটা জাত তবে তারা চোখ সবুজ অথবা রক্তলাল চোখ নিয়ে জন্মে। বলা হয়ে থাকে যে তারা দেবতাদের থেকে নির্বাচিত সন্তান। যদিও তারা খুব কম জন্মে, বাঁচেও অল্পসময় তবে তাদের বিশেষত্ব হচ্ছে প্রখর জাদুশক্তি) এই বৃক্ষে চোখ এঁকে রাখতো, এবং এর মাধ্যমে তাদের বনের দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতো এবং তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতো। যেহেতু বৃক্ষের সময়জ্ঞান নেই তাই এর মাধ্যমে গ্রিনসিয়াররা বর্তমান ও অতীত সব প্রত্যক্ষ করতে পারতো।
এতদিন শান্তির ভূমি ওয়েস্টেরসে মানুষ আসার পরই বিবাদ শুরু হয়। মানুষ বসবাসের জন্য তার স্বভাব অনুযায়ী গাছ কাটা,জায়গা দখল করা শুরু করে। বিশেষ করে তারা সেই চিলড্রেনদের দেবতা ‘ওয়্যারউড’ নামের গাছটি দেদারছে কেটে পুড়িয়ে দিতে শুরু করলো, কারন তারা মনে করতো এর মাধ্যমে চিলড্রেনরা তাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে। তো এটা নিয়েই শুরু হয় প্রথম যুদ্ধ।
যুদ্ধে ফার্স্ট মেনদের ব্রোঞ্জের অস্ত্র ছিল চিলড্রেনদের পাথর নির্মিত অস্ত্রের চেয়ে বেশি কার্যক্ষম; চিলড্রেনরা যা মূলত বানিয়েছিল শিকারের প্রয়োজনে। তবে ফার্স্ট মেনদের সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ ছিল সংখ্যাধিক্য। ফলে একতরফাভাবে চিলড্রেনরা মরতে থাকে। আগেই বলেছি চিলড্রেন অফ ফরেস্টদের ছিল পাওয়ারফুল ম্যাজিক বা জাদুবিদ্যা। এর মাধ্যমে তারা চেষ্টা করলো দক্ষিণের সেই ‘আর্ম অফ ডর্ণ’ নামক স্থল-ব্রিজটি সমুদ্রের পানিতে ডুবিয়ে দিতে। গ্রিনসিয়ারদের ম্যাজিকে জায়গাটা খন্ড বিখন্ড হয়ে কতগুলো দ্বীপে পরিনত হয়ে যায়। তবে তাতে এসস থেকে ওয়েস্টেরসে মানুষের আগমন থেকে থাকেনি।
ফার্স্ট মেনরা ক্রমশই দক্ষিণ থেকে উত্তরের গভীর বনাঞ্চলের দিকে চিলড্রেনদের পবিত্র বৃক্ষ নিধন করতে করতে আগাতে থাকে। আর ওয়েস্টেরসের উত্তরের ঘন বনেই চিলড্রেনদের সবচেয়ে বেশি বসবাস ছিল। ফলে চিলড্রেনরা আবারো সমুদ্রের দ্বারস্থ হয়। ওয়েস্টেরসের সবথেকে সরু ‘নেক’ নামক জায়গাটা সমুদ্রে প্লাবিত করে পুরো ওয়েস্টেরসকে দুটো ভাগ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় যাতে মানুষ আর উত্তরে না আগাতে পারে। কিন্তু তাদের ম্যাজিক পুরোপুরি কাজে দেয়নি বরং জায়গাটা প্লাবিত হয়ে ভিজে স্যাতস্যাতে হয়ে প্লাবনভূমিতে পরিনত হয় [হাজার বছর পরে এই জায়গা থেকেই এক বীরের উত্থান হবে, প্রয়োজন হলে তার বর্ণনা যথাস্থানে করা হবে]
ফার্স্ট মেন এবং চিলড্রেনদের মধ্যকার এই খন্ডযুদ্ধ প্রায় ২০০০ বছর ধরে চলে। হাজার বছরের রক্তারক্তির পর দুই পক্ষই নিজেদের স্বার্থে একটা মিমাংসায় চলে আসে। ওয়েস্টেরসের রিভারল্যান্ডসে ‘গডস আই’ নামক লেকের পাড়ে ওয়্যারউড ট্রি কে সাক্ষী রেখে উভয়পক্ষই কিছু চুক্তিতে একমত হয়। এই চুক্তিনামার নাম প্যাক্ট। এই প্যাক্টের কিছু উল্লেখযোগ্য চুক্তি হলো-
★মানুষ জঙ্গল নিধন থেকে বিরত থাকবে।
★ওয়্যারউড ট্রি বা পবিত্র গাছ কাটবে না বা আগুন ধরিয়ে দিবে না।
★সমতল ভূমির মালিকানা থাকবে মানুষের কাছে।
★জঙ্গলের মালিকানা থাকবে চিলড্রেনদের কাছে।
(ভবিষ্যতে ফার্স্ট মেনরাও তাদের বিয়ে, বিশেষ শর্ত, চুক্তিতে ওয়্যারউডকে সাক্ষী রাখতে শুরু করে। বলা বাহুল্য ফার্স্ট মেনরাও চিলড্রেনদের ওল্ড গডস বা মেনি গডসে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল)
এই চুক্তি নামাকে স্বরণীয় করে রাখতে এবং মানুষের সাথে সৌহার্দ্য ধরে রাখতে তারা চুক্তিনামার স্থানে যত গাছ ছিল সবগুলোতে মানুষের মুখ এঁকে রাখে। ফলশ্রুতিতে এই জায়গার নাম হয়ে যায় ‘আইল অফ ফেসেস’। এই চুক্তির পরেও দুয়েকবার টুকটাক যুদ্ধ বেঁধেছিল। কিন্তু সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। উভয় জাতি শান্তিতে বসবাস করে আরো প্রায় ২০০০ বছর। ডন এজের কাহিনী মোটামুটি এতটুকুই।
Age of Heros || নায়কদের যুগ
____________
চুক্তি পরবর্তী ৪০০০ বছর সময়কে বলা হয় এজ অফ হিরোস। ডন এজের মত এ যুগটিও বই পুস্তকে তেমন উল্লেখ না পাওয়া গেলেও গানের মাধ্যমেই এ যুগের কীর্তি গাওয়া হয়। তাছাড়া এই যুগের বিখ্যাত কিছু স্থাপনাও সহস্রাব্দ ধরে এই যুগের জয়গান করে চলেছে। এ সময়কালের এমন নামকরণের কারন এখানে ইতিহাসবিখ্যাত কয়েকজন মানুষের উল্লেখ পাওয়া যায়। তারা বিভিন্নভাবে মানুষের জন্য অবদান রেখেছেন, সমাজকে বদলাতে সাহায্য করেছেন এবং নিজেকে মানব সভ্যতা রক্ষার্থে বিসর্জন দিয়েছেন। এসব হিরোদের মধ্যে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো_
★ব্রান্ডন দ্য বিল্ডার্সঃ তার এই উপাধির কারন সে তার জীবনে উল্লেখযোগ্য অনেক কিছুই নির্মান করেছে। যার মধ্যে বিখ্যাত ‘দ্য ওয়াল’, ‘উইন্টারফেল’। এই ব্রান্ডনই হাউজ স্টার্কের পূর্বপুরুষ। বলা হয়ে থাকে ডুরানকে তার স্টর্মসএন্ডের বিখ্যাত প্রসাদ নির্মানেও সাহায্য করেছিলেন ব্রান্ডন।
★গার্থ গ্রিনহ্যান্ডঃ ইনি ছিলেন হাউস গার্ডেনারের প্রতিষ্ঠাতা, Casterly Rock-এর নির্মাতা এবং House Casterly-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চাষাবাদের কলাকৌশল আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। ধারণা করা হয় তিনিই সম্ভবত হাউস ল্যানিস্টারের পূর্বপুরুষ, তবে বিপক্ষেও মত আছে। তার অজস্র সন্তান ছিল, তাদের অনেকেও ইতিহাসখ্যাত। যেমন তার কন্যা ফ্লোরিস দ্য ফক্স যিনি চতুরতার জন্য সে যুগে বিখ্যাত ছিলেন। একই সাথে তিনটি স্বামী ছিল তার, যার কেউ অন্যের কথা জানতো না😶। তার ছেলে হেরন্ডন অফ দ্য হর্ণও বিখ্যাত ছিলেন।
★ডুরান গডসগ্রিফঃ কিং ডুরান যাকে Durran Godsgrief বলা হয়। প্রথম স্টর্ম কিং, স্টর্মস এন্ডের নির্মাতা, হাউস ডুরান্ডনের প্রতিষ্ঠাতা। সমুদ্র এবং বায়ু দেবতার কন্যা এলেনেই এর প্রেমে পরে তাকে বিয়ে করেন। ক্রোধে দেবতারা একটি ঝড় পাঠায়, তার দুর্গ ধ্বংস করে তার পরিবার এবং অতিথিদের হত্যা করে। ডুরান তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নতুন দুর্গ তৈরি করেছিলেন, প্রতিটি পূর্বের চেয়ে বড় এবং আরও শক্তিশালী করে, সবগুলোই ঐশ্বরিক ঝড়ের দ্বারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে, সপ্তম দুর্গ, যেটি ডুরান চিলড্রেন অফ ফরেস্ট বা খুব অল্প বয়স্ক ব্রান দ্য বিল্ডারের সহায়তায় তৈরি করেছিলেন। সাত নাম্বার দুর্গটি দেবতাদের ক্রোধ সহ্য করে এবং স্টর্মস এন্ড নামে পরিচিত হয়, এবং ডুরান ‘ডুরান গডসগ্রিফ’ বা ‘দেবতাদের দুঃখ’ ডাকনাম অর্জন করেছিলেন।
★দ্য গ্রে কিংঃ লেজেন্ড অনুযায়ী তিনি ঝড়ের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং প্রথম সামুদ্রিক ড্রাগন নাগাকে হত্যা করেছিলেন, যার হাড় তিনি তার দুর্গ তৈরি করতে নিয়েছিলেন। তিনি হাউস গ্রেজয়ের পূর্বপুরুষ ছিলেন।
চুক্তি পরবর্তী সময়ে ফার্স্ট মেনরা যখন ওয়েস্টেরসে স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল, নিজস্ব চিন্তাধারা অনুযায়ী তারা শত শত গোত্র/কলোনিতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। মানুষের মধ্যকার রাজা বাদশা নিয়ে বিবাদ সর্বদা লেগেই ছিল। ফলে কোন স্থানেই কেউ একক রাজার অধীনস্থ হয়নি। তবে একটা গোত্র ধীরে ধীরে সবার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে সমাজকে স্থিতিশীল করে তোলে।তারা হলো হাউজ স্টার্ক। আগেই বলেছি যে চিলড্রেনদের সাথে ঝামেলা চলাকালীন সময়ে তারা তাদের স্থায়ী আবাসভূমির জন্য একদম ওয়েস্টেরসের উত্তরে চলে যায়। স্টার্করা উত্তরের সেই হিমশীতল ঠান্ডায় নিজেদের মানিয়ে নেয়, এবং এটাই তাদেরকে টিকিয়ে রাখবে সময়ের শেষ পর্যন্ত।
দীর্ঘ কালরাত, বরফ মানব এবং মৃতের দল
_____________
এই যুগের প্রথম ২০০০ বছর শান্তিতেই কাটে যা পূর্বে উল্লেখ করেছি। কৃষ্টি, কালচার, উদ্ভাবন, স্থাপনা সব মিলিয়ে যুগটা হয়তো স্বর্ণাক্ষরেই নিজের নাম লিখতে যাচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তী ২০০০ বছর ছিল ওয়েস্টেরসের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সময়। ওয়েস্টেরসে আবহাওয়ার ধরন একটু বৈচিত্র্যময়। এখানের প্রধান ঋতু হচ্ছে শীত, যা একটানা কয়েকবছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আবার শীত চলে গেলে পুনরায় আসতেও হয়তো কয়েকবছর কেটে যায়। অর্থাৎ এখানে ঋতুর পরিবর্তন ঘটে খুব ধীরে। ফার্স্ট মেনরা ওয়েস্টেরসে পা রাখার পরে কয়েকটা শীত পার করলেও সেগুলো তেমন দীর্ঘ ছিল না।
তবে হিরোজ এজের শেষদিকে গ্রীষ্মকালটা যখন মাত্রাতিরিক্ত বড় হচ্ছিল তখনই বোঝা যাচ্ছিল দীর্ঘ এক শীতকাল আসতে যাচ্ছে। তবে সবার কল্পনাকেও হার মানিয়ে সেই শীতকালটি দীর্ঘ হয় প্রায় এক প্রজন্ম। সূর্য অস্ত গিয়েছিল কয়েক দশকের জন্য। বাচ্চারা অন্ধকারে জন্ম নিয়ে অন্ধকারেই মারা যেত। তবে সত্যিকারের ভয়াবহতা শুরু হয় তার পরেই। সেই প্রচন্ড শীতে ওয়েস্টেরসের ইতিহাসে প্রথমবারের মত আগমন ঘটে আদার্সদের। ওয়েস্টেরসের সর্ব উত্তরের প্রান্ত ‘ল্যান্ড অফ অলওয়েজ উইন্টার’ যেখানে গ্রীষ্মকালেও তুষারপাত হয় সেখান থেকেই এদের আগমন। এরা মানুষের থেকে লম্বা, শরীর বরফের এবং রক্ত নীল বর্ণের। এদের চোখ তীব্র নীল, এবং তা এতটাই জ্বলজ্বলে যে তারার সাথে তুলনীয়। এদের কথা বলার নিজস্ব ভাষা আছে এবং তাদের কন্ঠস্বর ‘শীতে জমে যাওয়া হ্রদে বরফের কর্কশ ফাটল’ এর মত। মৃত ভালুক, ডায়ারউলফ, ম্যামথ এবং ঘোড়ার মত প্রানীকে তাদের বাহন হিসেবে দেখা গিয়েছে।
দিনের আলোতে কখনোই তাদের দেখা যায়নি, কেউ কেউ বলেন তাদের আগমনই রাত নিয়ে আসে। আদার্সরা তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে স্ফটিক লংসোড যা এতটাই স্বচ্ছ ও পাতলা যে বিশেষ কোণ থেকে দেখলে তা অদৃশ্য মনে হয়। তারা এসেছিল সমস্ত জীবনের অবসান ঘটাতে এবং বিশ্বকে অন্তহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন বরফে ঢেকে দিতে। তাদের অস্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো জবাব ছিলনা মানুষদের। কারন তাদের সেই ম্যাজিক্যাল সোর্ড দিয়ে মানুষের ব্রোঞ্জ নির্মিত তরবারি মাখনের মত কাঁটা যেত। তাও হয়তো মানুষ তাদের থেকে পালিয়ে, লুকিয়ে কোনোমতে থাকতে পারতো। কিন্তু আদার্সরা তাদের জাদুশক্তি/ক্ষমতা প্রয়োগ করে মৃতদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো। এদেরকে বলা হয় উইটস বা পুনরুজ্জীবিতদের দল। এদেরকে হয়তো কেটে টুকরো টুকরো করা যেত কিন্তু পুনরায় আবার এরা জেগে উঠতো। এক আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেললে রক্ষা।
কিন্তু এত অধিক সংখ্যক মৃতের জন্য পর্যাপ্ত আগুন জ্বালানোর মানুষই ছিল না। তাছাড়া সেই তুষারঝড়ের মধ্যে আগুন জ্বালানো সহজসাধ্য কোনো কাজ ছিল না। কবর থেকে শত শত বছর পূর্বের মৃতরা পর্যন্ত বের হতে লাগলো। এবং তাদের একটাই লক্ষ্য, জীবিতদের হত্যা করা। তীব্র ঠাণ্ডা, সূর্যালোকের অভাব, খাদ্যের অভাব, আদার্স এবং তাদের দাস উইটসদের আক্রমনে মানুষ এবং চিলড্রেন অফ ফরেস্টরা অস্তিত্ব সংকটে পরে যায়।
যারা মারা যেত তারা গিয়ে যুক্ত হত উইটসদের সাথে। রাজারা বাঁচার জন্য তাদের দূর্গে লুকিয়ে ছিল এবং সেখানেই ঠান্ডায় জমে মারা যেত। মায়েরা তাদের বাচ্চাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করতো যেন ক্ষুধার কষ্টে ধুঁকে ধুঁকে না মরে। বরফ জমে জমে একশ ফুট উঁচু হয়ে গিয়েছিল, তার নিচে মানুষের সব ফসল, গৃহপালিত পশু চাপা পড়েছিল। অসহ্য দীর্ঘ, তীব্র শীত, ভয়াবহ অন্ধকারাচ্ছন্ন এই সময়টাই ‘Long Night’ নামে পরিচিত।
দ্য লাস্ট হিরো, একটি আত্মত্যাগ এবং কালজয়ী স্থাপনা
_________________
সর্বযুগেই মানুষদের মধ্যে কিছু সত্যিকারের নায়কদের অস্তিত্ব ছিল। এ যুগেও তেমন কয়েকজন নায়কদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা মানুষ ও চিলড্রেন অফ ফরেস্টদের একত্রিত করে আদার্সদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে যুদ্ধ করে। এই যুদ্ধের নাম ‘Battle for the Dawn’ বা ‘ভোরের জন্য যুদ্ধ’। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই আদার্সদের বিতাড়িত করা সম্ভব হয়। এই যুদ্ধ নিয়ে যা বলা আছে সবই মিথ এবং গানের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়।
সুতরাং এর সত্যতা যাচাই করা আজ অসম্ভব। ‘দ্য নাইট দ্যাট এন্ডেড’ গানে দুইটি নাম পাওয়া যায়। একজনকে উল্লেখ করা হয় ‘দ্য লাস্ট হিরো’, আরেকটি নাম ‘আযর আহাই’। এটা নিয়ে সন্দেহ এবং মতভেদ আছে যে এই দুটো নাম একই ব্যক্তির নাকি আলাদা দুজনের। তবে আমরা সেই সত্যতার বিচার না করে চলুন গানে সেই নায়কের বীরত্ব সম্পর্কে যা বলা হয়েছে সেটা জেনে আসি।
আযর আহাইয়ের জন্ম হাউজ ডেইনে এবং তিনি এই হাউজের গোত্রপ্রধান ছিলেন। তিনি সেই তীব্র শীত বা লং নাইটের পূর্বেই জন্মগ্রহণ করেছিল। একদিন সেই গোত্রের একজন লক্ষ্য করে আকাশ থেকে আগুনের মত কিছু একটা ছুটে আসছে। মূলত সেটা ছিল একটা উল্কাপাত। প্রচন্ড শক্ত সেই ধাতুটি সেই ব্যক্তি গোত্রপ্রধান আযর আহাইয়ের নিকট নিয়ে আসে। আযর আহাই মনে করে যে কোনো বিশেষ কারনে তার সৃষ্টিকর্তা তাকে এটা পাঠিয়েছেন।
এর কিছুবছর পরেই আদার্সদের আগমন ঘটে। ভয়াবহ সেই সময়ে মানুষের দূর্গতি দেখে মুক্তির পথ পেতে সে দিনরাত উপসনালয়ে তার সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করে। একটা সময় সে হঠাৎ অনুধাবন করে সেই বিশেষ ধাতুর অস্ত্রটি হয়তো আদার্সদের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে, কারন সেটা তার সৃষ্টিকর্তা তাকে আকাশ থেকে পাঠিয়েছেন। যাহোক সে সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দিয়ে একটা তরবারি বানানোর। উল্কাপিণ্ডটি দিয়ে সে বিশাল এক তরবারি বানিয়ে মন্দিরে তার গডসদের সামনে আগুনে তরবারি গেঁথে রেখে ৩০ দিন-রাত এর ঐশ্বরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রার্থনা করতে থাকে। ৩০ দিন পরে সে টেম্পারেটের জন্য তরবারিটা পানিতে চুবানোর সাথে সাথে সেটা ভেঙ্গে খন্ড বিখন্ড হয়ে যায়। পুনরায় সে সেই টুকরোগুলো পুড়িয়ে তরবারি বানিয়ে আগুনে রেখে ৫০ দিন-রাত প্রার্থনা করে।
এবার টেম্পারেটের জন্য তরবারিটা সে পানিতে না ডুবিয়ে রক্তে ডুবানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং একটা সিংহের বুকে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু এবারও সেটা আগেরবারের মত ভেঙ্গে যায়। আযর আহাই তখন বুঝতে পারে তার সৃষ্টিকর্তা তার থেকে সেক্রিফাইস চাচ্ছে। এবার সে তরবারি আগুনে রেখে টানা ১০০ দিন-রাত প্রার্থনা করে। আযর আহাই ভালবেসে বিয়ে করেছিল নিসা নিসা নামের এক মেয়েকে। তাদের মধ্যে ছিল অসম্ভব ভালোবাসা। তাদের প্রেম কাহিনী নিয়েও আলাদা গান রয়েছে। যাহোক বিশাল মানবতার স্বার্থে সে তার ভালোবাসা বিসর্জন দেয়। ১০০ দিন প্রার্থনার পর এবার সে নিসা নিসার বুকে তরবারি বসিয়ে দেয়। নিসা নিসার হৃদয়ের রক্তের সংস্পর্শে আসতেই তরবারি জীবন্ত রূপ ধারণ করে আগুনের ফুলকি জ্বলে ওঠে (জগৎ নির্মানে নারীদের অবদানও কি চমৎকারভাবে মার্টিন ইঙ্গিত করলেন!) যুদ্ধের সময় সর্বদা এটা থেকে ফুলকি বের হত।
এটার নাম দেয়া হয় লাইটবিঙ্গার। আযর আহাই এই তরবারি দিয়ে আদার্সদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এবং এর কিছুদিন পরেই আবিষ্কৃত হয় যে চিলড্রেনদের অস্ত্র ‘ড্রাগন গ্লাস’ বা অবসিডিয়ানও আদার্সদের বিরুদ্ধে কার্যকর। তখনই যোদ্ধারা তাদের হটাতে হটাতে একদম ওয়েস্টেরসের উত্তরের শেষ প্রান্ত ল্যান্ড অফ অলওয়েজ উইন্টারে, যেখান থেকে তারা এসেছিল সেখানেই পাঠিয়ে দেয়।
(প্রাচীন সঙ্গীতে এবং আশাইয়ের পুঁথিতে আযর আহাই বা লাস্ট হিরো সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় এভাবে “যখন অন্ধকার সমবেত হবে এবং লাল নক্ষত্র থেকে রক্তপাত হবে তখন ধোঁয়া ও লবনের মধ্যে থেকে আযর আহাই আবার জন্মগ্রহণ করবে”। যদিও টিভি সিরিজ ‘গেম অফ থ্রোন্স’ এ পুরো ব্যাপারটাই ভজকট পাকিয়ে ফেলেছে। উল্লেখ্য মার্টিন এখনো তার বই শেষ করেননি, আশা করি তিনি এসব ভবিষ্যদ্বাণীর একটা সুন্দর সমাপ্তি দিবেন)
যেহেতু আদার্সদের একদম নিশ্চিহ্ন করা যায়নি, ভবিষ্যতে আবারও তারা আক্রমণ করতে পারে এই চিন্তায় ‘ব্রান দ্য বিল্ডার্স’ চিলড্রেনদের সাহায্য নিয়ে মাটি,পাথর, জাদু ও জায়ান্টদের সহায়তায় তৈরি করে ‘দ্য ওয়াল’, উল্লেখ্য জায়ান্টরা একদম শুরু থেকেই চিলড্রেন অফ দ্য ফরেস্টদের পাশাপাশি ওয়েস্টেরসে সহাবস্থান করতো। আকারে বিশাল হলেও তারা ছিল শান্তশিষ্ট। তাদের সংখ্যাও ছিল নগন্য। দ্য ওয়াল দৈর্ঘ্যে ৩০০ মাইল, উচ্চতায় ৭০০ ফিট। পূর্বদিকে দেয়াল পতিত হয় সাগরে আর পশ্চিমে নদীতে। দেয়ালকে পাহারা দেয়ার জন্য ১৯ টা ক্যাসল নির্মান করা হয়। যদিও একসাথে এসব ক্যাসল নির্মিত হয়নি।
সর্বপ্রথম নির্মিত ক্যাসল ‘নাইটফোর্ড’, যা মূল ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হত। পাহারাদার হিসেবে ‘নাইটস ওয়াচ’ নামে একটা দল গঠন করা হয়। প্রতিটা রাজ্য থেকে তখন নাইটস ওয়াচে লোক পাঠানো বাধ্যতামূলক ছিল। তাছাড়া প্রত্যেক রাজারা দেয়াল রক্ষার্থে নাইটস ওয়াচে মোটা অংকের অর্থ, সৈন্য, খাবারদাবার প্রেরণ করতেন। নাইটস ওয়াচের ব্রাদার্সরা দেয়ালের ওপর হেঁটে হেঁটে দেয়ালকে পাহারা দিতেন। উল্লেখ্য দেয়াল এতটাই চওড়া ছিল যে একসাথে পাশাপাশি একডজন ওয়াচার হাঁটতে পারতো। বরফের ওপরে হাঁটার সুবিধার্থে পাথরের কুচি ছিটিয়ে দেয়া হত। দেয়ালের একমাইলের মধ্যে কোন গাছ জন্মালেই নিরাপত্তার জন্য কেটে ফেলা হত। দেয়ালের নিজস্ব কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থাও ছিল।
যেমন তীরান্দাজদের জন্য গোপন ফুটো ছিল দেয়ালে। তাছাড়া শত্রুর ওপর পাথর, বরফ এবং তেলের ব্যারেল নিক্ষেপ করার যন্ত্রও ছিল। মোটকথা এই দেয়াল ছিল তৎকালীন মানুষের বেঁচে থাকার প্রতীক। নাইটস ওয়াচের সদস্য হওয়াটা ছিল তৎকালীন খুব গর্বের বিষয়। মানুষ অন্তত শ্রদ্ধার চোখে দেখতো তাদের। বিভিন্ন হাউজের গর্বের বিষয় ছিল তাদের নাইটস ওয়াচের সদস্য সংখ্যা। কিন্তু খুব ধীরে এসব কিছুই পাল্টে যাবে সামনে, তবে সেসব আরো অনেক পরের কথা। যথাস্থানে তা তুলে ধরা হবে।
‘হিরোজ এজ’ এর শেষ ২০০০ বছরের কাহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এগুলোই।
দ্বিতীয় মানবদলের আগমন, সেভেন কিংডমের উত্থান
_____________
এ্যান্ডালসরা হল ওয়েস্টেরসে আসা মানুষের দ্বিতীয় দল। তারা আসে সাগরের ওপর প্রান্ত এসসের ‘আন্দালুস’ নামক জায়গা থেকে। তারা ন্যারো সি উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করতো। তাদের ওয়েস্টেরসে আসার সময় নিয়ে মতবাদ রয়েছে। কেউ বলে তারা ৬০০০ AC তে এসেছে, কারো মতে ৪০০০ AC, মেইস্টারগনদের মতে তারা ২০০০ AC এর আগে আসেনি।
কেন তারা এসস ছেড়ে দীর্ঘ সমুদ্রপথ অতিক্রম করে এপাড়ে এসেছিল তা নিয়েও রয়েছে নানা মতবাদ। এ্যান্ডালসদের কিংবদন্তি অনুসারে সৃষ্টিকর্তা আন্দালুসের পাহাড়ে সাতটি রূপে তাদের নিকট নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন। এবং এখান থেকেই তারা একটি ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে তোলে ‘ফেইথ অফ দ্য সেভেন’ নামে। এই ধর্মানুসারে সাতটি সত্ত্বা রয়েছে, মানুষের যখন যেটার প্রয়োজন হত সেই সত্ত্বার নিকট প্রার্থনা করতো। সাতটা সত্ত্বা যথাক্রমে-
★ফাদার
★মাদার
★মেইডেন
★ক্রাউন
★ওয়ারিয়র
★স্মিথ
★স্ট্রেঞ্জার
তাদের কিংবদন্তি অনুযায়ী তারা তাদের ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী মেনে এপাড়ে আসে। ভবিষ্যদ্বাণীতে নাকি বলা হয়েছে তারা বিশাল এক জায়গা পাবে, সেখানে তারা তাদের জীবন শান্তিতে কাটাতে পারবে। তবে মেইস্টারগন বলেন ওপারে তখন ভ্যালারিয়ান ফ্রি-হোল্ড নামক এক জাতির দাপটে তাদের টেকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারন যেভাবেই হোক তারা পোষ মানাতে পেরেছিল জগতের সবথেকে শক্তিশালী প্রানী ড্রাগনকে (বিস্তারিত সামনেই আসবে)।
ক্রমশই তারা এসোসের জায়গা, জমি, সম্পত্তি সব দখল করে নিচ্ছিল। ফলে বাধ্য হয়েই তারা এপাড়ে চলে আসে। তারা প্রথমে ওয়েস্টেরসের ফিঙ্গার নামক স্থানে এসে একত্রিত হয়। এবং খুব দ্রুত ওয়েস্টেরসের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং সবকিছু জয় করতে থাকে। এসোস থেকে তারা নিয়ে এসেছিল উন্নত স্টিল এবং লৌহ প্রযুক্তির হাতিয়ার। বিপরীতে ফার্স্ট মেনদের ছিল নমনীয় ব্রোঞ্জ। এ্যান্ডালসদের সৈন্যদলের ছিল উন্নত আর্মর, যা ফার্স্ট মেনরা প্রথমবার দেখেছিল। তাছাড়া এ্যান্ডালসদের আক্রমণের প্রাক্কালে ওয়েস্টেরসে ফার্স্ট মেনদের একক কোনো রাজা বা রাজত্ব ছিল না, তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করতো। ফলে কিছুতেই ফার্স্ট মেনরা একত্রিত হয়ে এ্যান্ডালসদের বিরুদ্ধে দাড়াতে পারেনি।
তবে এ্যান্ডালসদের আক্রমণের সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছিল চিলড্রেন অফ ফরেস্টরা। চিলড্রেন অফ ফরেস্টরা যেহেতু ওল্ড গডসের বিশ্বাস প্রচার করেছিল, তাই নিউ গডস তথা ‘ফেইথ অফ দি সেভেন’ এ বিশ্বাসী এন্ড্যালসরা চিলড্রেনদেরকে তাদের ধর্মের অবমাননাকারী মনে করতো। তাই তারা দক্ষিণের সমস্ত ওয়্যারউড গাছ কেটে নিশ্চিহ্ন করে, গ্রিনসিয়ারদের আঁকা মুখকে বিকৃত করে কুঁচকে দেয় এবং চিলড্রেনদের অবাধে মারতে থাকে।
বলা হয় ফার্স্ট মেনরা তাদের ব্রোঞ্জ দিয়ে অর্ধেক চিলড্রেনদের হত্যা করেছিল, বাকি অর্ধেক এ্যান্ডালস রা লৌহ দিয়ে শেষ করে দেয়। এরপর যে অল্প সংখ্যক চিলড্রেনরা বেঁচেছিল তারা সেই দেয়াল পেরিয়ে নিজেদের স্বার্থে ‘ল্যান্ড অফ অলওয়েজ উইন্টার’ এ চলে যায়। দেয়ালের এপারে তাদের ইতিহাস এখানেই শেষ।
এ্যান্ডালসরা যুদ্ধ এবং বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে ওয়েস্টেরসের সর্বত্র নিজেদের কব্জায় নিলেও একমাত্র ‘উত্তর’ ফার্স্ট মেনদের কাছেই থাকে। এর পেছনে কতগুলো কারন ছিল। প্রথমত ‘নেক’ নামক সরু যে গায়গাটা সহস্রাব্দ বছর আগে গ্রিনসিয়াররা ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল সেখানে বহু বছর আগেই ফার্স্ট মেনরা ‘মোট কেইলিন’ নামে একটা দুর্গ নির্মান করেছিল। এর দুইপাশেই ছিল সমুদ্র। জায়গাটা এতটাই সরু যে দুর্গটা পুরো জায়গাজুড়ে নির্মিত হয়েছিল। অর্থাৎ কাউকে উত্তরে যেতে হলে ঐ দুর্গের ভেতর থেকেই যেতে হবে।
ফার্স্ট মেনরা খুব শক্তভাবে এই দুর্গ পাহারা দিয়েছিল। আগেই বলেছি এ অঞ্চলের স্টার্ক ফ্যামিলির নিয়ন্ত্রণে উত্তরবাসীরা ছিল একত্রিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ। তাছাড়া এ্যান্ডালসরা বুঝতে পেরেছিল যদিও তারা উত্তর জয় করে তবুও উত্তরের ঐ হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় তারা টিকে থাকতে পারবে না। সুতরাং একমাত্র উইন্টারফেলই ফার্স্ট মেনদের স্থান হিসেবে টিকে থাকে। এবং তারা ফার্স্ট মেনদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট।
এ্যান্ডালসরা উত্তর ছাড়া বাকি সব রাজ্য জয় করলেও তারা নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে পারেনি। কেউ কোনো স্থান জয় করার পরেই নিজেকে সেখানকার রাজা হিসেবে ঘোষণা দিত।
ফলে নিজেদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সুতরাং ওয়েস্টেরসকে একটি রাজ্য হিসেবে তারা শাসন করতে পারেনি। এভাবে ধীরে ধীরে ওয়েস্টেরস সাতটি প্রধান ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় ঐতিহাসিক সাত রাজ্য বা ‘সেভেন কিংডম’ এর। যার প্রথম ছয়টা থাকে এ্যান্ডালস তথা দ্বিতীয় মানবদলের কাছে আর একমাত্র নর্থ থাকে ফার্স্ট ম্যানদের কাছে। সাতটি রাজ্য যথাক্রমে-
★দ্য স্টোর্মসল্যান্ড
★দ্য রক
★দ্য ডর্ন
★দ্য রীচ
★দ্য ভেইল
★দ্য আইল
★দ্য নর্থ
(এই ছয়টা রাজ্য কিভাবে এ্যান্ডালসরা জয় করে তার বিস্তারিত বর্ণনা আছে, তবে সেসব দিতে গেলে আলাদা আলাদা পোস্ট করতে হবে। তেমন দরকারি নয় বলে এগুলো বাদ দিলাম)
প্রকৃতপক্ষে পুরো ওয়েস্টেরসই এ্যান্ডলসদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। তাদের ভাষাই ওয়েস্টেরসের সবার সাধারণ ভাষা হয়ে যায়। এ্যান্ডালসদের ধর্ম ‘ফেইথ অফ দি সেভেন’ হয়ে যায় ওয়েস্টেরসের প্রধান ধর্ম। একমাত্র নর্দানরাই তাদের ওল্ড গডসের বিশ্বাস এবং ঐতিহ্য ধরে রাখে।
এদিকে দেয়াল তৈরির পর কয়েকহাজার বছর কেটে যাওয়ার পর আদার্সদের বিষয়টা শুধু গল্প গাঁথার অংশ হয়ে গেছে। আর এ্যান্ডালসরা ওয়েস্টেরসে যেহেতু এসেছে আদার্সদের আক্রমণের পরে, তাই তাদের নিয়ে এ্যান্ডলসদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে এ বিষয়টি তারা নিছক গাল-গল্প মনে করত। কিন্তু শুধু তারাই নয় বরং সময়ের বিবর্তনে ফার্স্ট মেনরা যাদের নিকট তাদের ধর্ম ও পূর্বপুরুষগন অত্যন্ত শ্রদ্ধার বিষয় তারাই এবিষয়ে আর বিশ্বাস করতে পারছিল না। নাইটস ওয়াচেও আর সেই পূর্বের সম্মান নেই।
ডক্টর স্ট্রেঞ্জ (2016) মুভি রিভিউ
দেয়াল পাহারা দেওয়াটা এখন শুধু অর্থহীন অভ্যাসের বিষয় হয়ে গিয়েছে। তাই নাইটস ওয়াচে এখন আর সম্ভ্রান্ত কেউ বা স্বেচ্ছাসেবক দল আসে না বরং সেখানে এ্যান্ডালসরা তাদের সাথে যুদ্ধে পরাজিতদের এবং সেভেন রাজ্যের যত চোর, ডাকাত আছে তাদের পাঠিয়ে দিত। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা এমন, হয় পাপের শাস্তির ফলস্বরূপ মর, অথবা দেয়ালে গিয়ে পাহারা দাও। ধীরে ধীরে ওয়াচারদের সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে আসে। ফলে সেই দেয়ালজুড়ে নির্মিত ১৯ টা ক্যাসল পাহারা দেয়ার মত জনবলও আর থাকে না।
একসময় নাইটফোর্ডের মত বড় ক্যাসলও তারা দেখেশুনে রাখতে পারে না, ফলশ্রুতিতে তুলনামূলক ছোট দূর্গ ‘ক্যাসল ব্ল্যাক’ কে মূল ঘাঁটি হিসেবে বেছে নেয়। ক্যাসল ব্ল্যাক এবং দেয়ালের দুই প্রান্তের দুইটা দুর্গ যথা পূর্বে ‘ইস্টওয়াচ’ এবং পশ্চিমে ‘শ্যাডো টাওয়ার’ এই তিনটা ওয়াচ টাওয়ার ছাড়া বাকি ১৬ টি ক্যাসল সময়ের বিবর্তনে, সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে থাকে।
সমুদ্রের একপ্রান্তে ওয়েস্টেরসে যখন এতকিছু ঘটেছিল, অপর প্রান্ত ‘এসোস’ ভূখন্ডেও নানা ঘটনা ঘটছিল। ফ্রি হোল্ড নামক এক জাতি ম্যাজিক্যাল এক প্রানীর মাধ্যমে এমন সভ্যতা গড়ে তোলে যা তৎকালীন সব সভ্যতাকে টিটকারি দিচ্ছিল। এই মহান সভ্যতা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল সময়ের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার। তবে দুর্ভাগ্যজনক তা হয়নি। কি হয়েছিল সেখানে তা জানতে আগামী পর্বে আমার সাগর পাড়ি দিয়ে চলে যাব এসোসে।
[ আগামী পর্বে থাকবে একটি উড়ন্ত দৈত্যের গল্প, একটি কেয়ামত এবং রূপকথার গল্পের মত এক সর্বজয়ী রাজার গল্প। প্রতি দুইদিন পরপর পরবর্তী পর্ব পোস্ট করা হবে]
#ভালার_মরগুলিস