এক কা দাম মুভি রিভিউ Ek Nenokkadine Movie Review

আমার দেখা এখন পর্যন্ত মহেশ বাবুর চয়েজ করা বেস্ট স্ক্রিপ্ট এবং পরিচালক সুকুমারের পরিচালিত বেস্ট ফিল্ম ছিলো Ek Nenokkadine!!! যেটা হিন্দি ডাবিং এ এক কা দাম বা Ek Ka Dum নামে মুক্তি পেয়েছিল।
সবথেকে সেরা বা বেস্ট, কেননা অন্য আট-দশটা সাউথ ফিল্মের থেকে ভিন্ন ছিলো এই ফিল্ম।

এক কা দাম মুভি রিভিউ

লুতুপুতু প্রেম- ভালবাসা-আইটেম গান-ঢিশুম ঢিশুম এসব থেকে বেরিয়ে ভিন্ন কিছুর চেষ্টা ছিলো এই ফিল্ম। 

❝হ্যালুসিনেশন❞ এর মতো একটা চমকপ্রদ একটা বিষয়কে হাইলাইট করা হয়েছে এই ফিল্মে।   সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার এই ফিল্মটা পুরোটা সময় জুড়ে ব্রেইন নিয়ে দারুণ খেলেছে! 
প্রথমে আসি ❝হ্যালুসিনেশন❞ এর ব্যাখায়! 
হ্যালুসিনেশন বা অবচেতন মনের কল্পনা হচ্ছে মানসিক এক ধরনের রোগ। এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা বাস্তব এবং কল্পনার মধ্যে তফাৎ বুঝতে পারে না। এদের কাছে যেটা বাস্তব, আদতে তা নিছক কল্পনা মাত্র। আবার যাহা কল্পনা, তাহার অস্তিত্ব হয়তো বাস্তবে বিরাজমান!
 সত্যি বলতে গেলে এধরনের রোগীরা একপ্রকার জীবন্ত লাশ। কেননা প্রতিটা মুহুর্তে এদের একধরনের আতঙ্কে থাকতে হয় যে এই বুঝি চোখের সামনে যা হচ্ছে তা কল্পনা। প্রতিটা মুহুর্তে এদের লড়াইটা হয় নিজের সাথে নিজের, নিজের কল্পনার সাথে বাস্তব পৃথিবীর!
বোঝাই যাচ্ছে সাউথের অন্যান্য ফিল্ম থেকে এই প্রজেক্টটা ছিলো বেশ রিস্কি! পারতপক্ষে এসব রিস্কি প্রজেক্টে কাজ শুরু করলে পাবলিক রেসপন্স থাকে অনেক কম, কেননা একজন দর্শক সিনেমাহলে যায় সময়ক্ষেপণ করতে, ব্রেইন খাটাতে নয়। 
সুতরাং যেসব ফিল্মে একটু ব্রেইন খাটাতে হবে, একটু সাইকোলজিক্যালি চিন্তা করতে হবে সেসব ফিল্ম ডিজাস্টার হবেই এটাই স্বাভাবিক। এটা শুধুমাত্র ভারতের বেলায় নয়। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সব অডিয়েন্সই সমান। কেননা এরা মৌমাছি আর মাছির তফাৎ বুঝতে চায় না। 
বাংলাদেশেও এধরণের ফিল্ম রিলিজ হলে ফ্লপই হতো! তাই বেশি একটা অবাক হচ্ছি না বৈকি! 
সাইকোলজিক্যালি চিন্তা করার বিষয় কেন বললাম? কেননা এই ফিল্মের কাহিনী বোঝার জন্য ডিটেইলসে প্রত্যেকটা চরিত্রে নজর দিতে হবে। একটু  বেখেয়াল হলেই কাহিনী বুঝতে সমস্যা হবে। 
Ek Nenokkadine
[ হালকা স্পয়লার ]
আগেই বলে দিচ্ছি বেশ জটিল একটা ফিল্ম। ফিল্মের কাহিনী বোঝার জন্য দু'টো ধাঁধা দিয়ে দিচ্ছি। প্রত্যেকটা দৃশ্য দেখার সময় ধাঁধাদুটো স্বরণে রাখতে হবে! 
১. মূখ্যভিলেন মূখ্যভিলেন নয়,  যে মূখ্যভিলেন নয় সেই মূখ্যভিলেন! 
২. যেটা কাহিনী সেটা কাহিনী নয়, যেটা কাহিনী নয় সেটাই কাহিনী! 
এই দু'টো ধাঁধা মনে রেখে ফিল্মটা দেখতে বসলে আপনি কাহিনী আঁচ করতে পারবেন! 
তো আমাদের গল্পের হিরো হ্যালুসিনেশন রোগে আক্রান্ত একজন রোগী। সে বাস্তব এবং কল্পনার ফারাক ধরতে পারে না। বাস্তব জীবনে সে একজন রকস্টার, বিভিন্ন স্টেজ পারফরম্যান্স করে অনেক ভক্তকূল তৈরি করে নিয়েছেন। 
তো সে বিভিন্ন সময় খেয়াল করেন যে একদল গ্যাংস্টার তাকে মারতে চাচ্ছে। সেও ঝোঁকের বশে প্রতিবার সেসব গ্যাংস্টারের পিছু নেয় এবং প্রত্যেককে মেরে ফেলে।
এরপর সিসিটিভির ক্যামেরায় দেখা যায় যে সে মূলত একাই দৌড়াদৌড়ি করছিলো, একাই হাত পা ছুঁড়ছিলো! 
__________________________________________
এইতো গল্পের শুরু মাত্র। শেষটা যে জায়গায় হয়েছে, দেখার পর আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে গেলে ভারতে এধরনের ফিল্ম এর আগে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
এতো জটিল একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ফিল্ম নির্মাণের পর যেখানে চারিদিকে শোর গোল পড়ে যাওয়ার কথা, সেখানে এই ফিল্মটা ছিলো সে বছর ২০১৪ সালের সবচেয়ে বড় ডিজাস্টার! 
এরকম একটা প্রজেক্ট ভারতে ফ্লপ কি করে হয় এটাই মাথায় আসে না! এই হচ্ছে আমাদের উপমহাদেশীয় অডিয়েন্স! 
যাইহোক হাতে সময় থাকলে ফিল্মটা এখুনি দেখুন। এরকম ফিল্ম সচরাচর বানানো হয় না। 
আমার পার্সোনাল রেটিং : ৯.৫/১০ থাকবে।

Leave a Comment

Total Views: 389

Scroll to Top